| |
               

মূল পাতা রাজনীতি ইসলামী দল সাংবাদিকদের সাথে খেলাফত মজলিসের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত


সাংবাদিকদের সাথে খেলাফত মজলিসের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত


রহমত নিউজ ডেস্ক     26 July, 2023     08:16 PM    


আগামী (২৯ জুলাই) সকাল ১০ টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে খেলাফত মজলিসের ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার (২৬ জুলাই) দুপুর ১টায় রাজধানীর বিজয়নগরস্থ (৫ম তলা)  কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের সামনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ও সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন। সভায় উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমীর মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, যুগ্ম মহাসচিব ও সমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আবদুল জলিল, প্রচার ও তথ্য সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুল হাফিজ খসরু, যুব বিষয়ক সম্পাদক তাওহীদুল ইসলাম তুহিন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস সেক্রেটারি জেনারেল রায়হান আলী, নির্বাহী সদস্য হাজী নুর হোসেন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন, মজলিসে শূরা সদস্য এডভোকেট রফিকুল ইসলাম, মহানগরী দক্ষিণ সহ-সাধারণ সম্পাদক কাজী আরিফুর রহমান, মহানগরী দক্ষিণ প্রচার সম্পাদক মনসুরুল আলম মনসুর, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস প্রশিক্ষণ ও ক্যাম্পাস সম্পাদক কেএম ইমরান হোসাইন প্রমুখ।

লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, আমরা দেশ ও জাতির এক সংকটময় মুহূর্তে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। বর্তমানে দেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক সংকট ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে। সীমাহীন দুর্নীতি, লুটপাট, অব্যবস্থাপনা ও বিদেশে অর্থ পাচারের কারণে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খাদের কিনারে এসে দাঁড়িয়েছে। দ্রব্যমূল্যে ঊর্ধ্বগতিতে জনগণের নাভিশ^াস উঠেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে এসে ঠেকেছে। বিদেশী ঋণের বোঝা দিন দিন বেড়েই চলছে। শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গণের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। অপসংস্কৃতির আগ্রাসনে আমাদের সাংষ্কৃতিক অস্তিত্ব হুমকীর মুখে। বেকার সমস্যা, মাদকাসক্তি, যুব সমাজের মাঝে হতাশা আশংকাজনক অবস্থায় রয়েছে। মানুষের জান মাল ও ইজ্জতের ন্যূনতম গ্যারান্টি নেই।  কর্তৃত্ববাদী সরকারের দমন-পীড়নে রাজনৈতক পরিস্থিতি ক্রমশ অস্থিতিশীল হচ্ছে। হত্যা-নির্যাতন, জেল-জুলুম, হামলা- মামলার মাধ্যমে বিরোধী রাজনৈতিক কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রিত বলয়ের মধ্যে আবদ্ধ করে ফেলা হয়েছে। বহু আলেম-ওলামাকে গ্রেফতার করে মামলা দিয়ে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ, সাংবাদিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে হরণ করা হচ্ছে। দেশের চলমান এই আর্থ-সামাজিক, শিক্ষা ও রাজনৈতিক সংকট নিরসনের লক্ষ্যে বিগত ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত গণসমাবেশে খেলাফত মজলিসের পক্ষ থেকে ৮ দফা জাতীয় দাবী পেশ করা হয়।

বর্তমান আর্থ-সামাজিক-শিক্ষা ও রাজনৈতিক সংকট নিরসনে খেলাফত মজলিসের ৮ দফা দাবি—

১. দল নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করা : রাজনৈতিক সংকট উত্তোরণে নির্বাচনের তিন মাস পূর্বে জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে দল নিরপেক্ষ নির্বাচনকালিন বা অন্তবর্তীকালিন সরকার গঠন করে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। এবং নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করত হবে।

২. নির্বাচনে সবার জন্যে সমান সুযোগ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা : নির্বাচনে সবার জন্যে সমান সুযোগ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং পেশীশক্তি ও অর্থশক্তি মুক্ত নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

৩. দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার বন্ধ রাখা : দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার বন্ধ রাখতে হবে। নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পক্ষসমুহকে আস্থায় না নিয়ে নির্বাচন কমিশন বা সরকারের একক সিদ্ধান্তে ইভিএম ব্যবহার করা যাবে না।

৪. গ্রেফতারকৃত আলেম উলামা ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহার করা : গ্রেফতারকৃত আলেম উলামা ও বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে এবং তাদের উপর দায়েরকৃত সমস্ত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

৫. রাজনৈতিক সভা-সমাবেশের অবাধ সুযোগ নিশ্চিত করা : বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহকে সভা-সমাবশ করার অবাধ সুযোগ দিতে হবে। বিরোধী দলসমুহের কর্মসূচিতে বাঁধা দান, হয়রাণী, গ্রেফতার, মামলা, হামলা বন্ধ করতে হবে।

৬. পণ্যমূল্য কমিয়ে জনদুর্ভোগ লাঘব ও দুর্নীতি নির্মূল করা : জ্বালানী তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং খাদ্যদ্রব্যসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য কমিয়ে ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে এনে জনগণের দূর্ভোগ লাঘব করতে হবে এবং সাথে সাথে অর্থ পাচার রোধ ও বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরৎ আনাসহ সর্বক্ষেত্রে দূর্নীতি নির্মূল করার কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

৭. বেকার সমস্যা সমাধান ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সরকারি চাকুরীতে নিয়োগ দান : দেশের বেকারত্ব দূর করার জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ সর্বাত্মক ব্যবস্থা অবলম্বনের পদক্ষেপ নিতে হবে এবং সকল প্রকার বৈষম্য দূর করে সব সরকারী চাকুরিতে যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ দানের ব্যবস্থা করতে হবে।

৮. ধর্মীয় শিক্ষা সংকোচন নীতি বন্ধ ও বিতর্কিত পাঠ্যক্রম বাতিল করা : সাধারণ শিক্ষায় ধর্মীয় শিক্ষা সংকোচন নীতি বন্ধ করতে হবে এবং সকল বোর্ড পরীক্ষায় ধর্মীয় বিষয়কে আবশ্যকীয় বিষয় হিসাবে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। শিক্ষার সর্বস্তরে ধর্মশিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে। বর্তমান শিক্ষানীতির আলোকে প্রণীত স্কুল-মাদ্রাসার পাঠ্যপুস্তক থেকে ইসলামী চিন্তা-বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক যাবতীয় বিষয়াদী বাদ দিতে হবে। সমতা সৃষ্টির নামে সাধারণ পাঠ্য বইয়ের মাধ্যমে মাদরাসায় ইসলামী শিক্ষার মান ও পরিবেশ কোন ক্রমেই ক্ষুন্ন হতে দেয়া যাবে না।

এডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, এসব দাবী আদায়ের লক্ষ্যে খেলাফত মজলিস গত ফেব্রুয়ারি-২০২৩ থেকে ঢাকাসহ দেশব্যাপী মহানগরী, জেলা, উপজেলায় বিক্ষোভ, মানববন্ধন, সভা-সমাবেশের কর্মসূচী পালন করছে। তারই ধারাবাহিকতায় ১৩ জুলাই ২০২৩ থেকে ১০টি বিভাগীয় সমাবেশের কর্মসূচী ঘোষণা করে এবং এ পর্যন্ত রাজশাহী, রংপুর, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, বরিশাল ও সিলেটে বিভাগীয় সমাবেশ সুশৃঙ্খল ও সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আগামীকাল ২৭ জুলাই খুলনা এবং সর্বশেষ আগামী ২৯ জুলাই শনিবার সকাল ১০টায় রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। আমরা মনে করি চলমান আর্থ-সামজিক ও রাজনৈতিক সংকট সমাধানে খেলাফত মজলিস ঘোষিত ৮ দফা দাবী বাস্তবায়ন দেশ-জাতির মুক্তির জন্য অপরিহার্য। বিশেষ করে দলনিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করার মধ্য দিয়ে একটি জনপ্রতিনিধিত্বশীল ও জবাবদিহীমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ লক্ষ্যে আগামী ২৯ জুলাই সকাল ১০টায় রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে সফল করতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। একই সাথে জাতির বিবেক সাংবাদিক ও মিডিয়া কর্মীদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।